সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

ই-পাসপোর্টে দীর্ঘ ভোগান্তি

ই-পাসপোর্টে দীর্ঘ ভোগান্তি

স্বদেশ ডেস্ক

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাসপোর্ট ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছিল ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট। কার্যক্রমের শুরুতে বলা হয়েছিল সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যেই ভোগান্তি ছাড়া নাগরিকরা এ পাসপোর্ট পাবেন। অথচ সে আশাবাদ আজ গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। এখন ই-পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারছে না ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন করতে গিয়েও দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকের বিদেশযাত্রাও বাতিল হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য রোগী ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক কাজে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। পাসপোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন হজ ও ওমরা গমনেচ্ছুরাও।

গত রবিবার রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার এমন অসংখ্য মানুষের দেখা পাওয়া গেছে। নির্ধারিত সময়ে তাদের অনেকেই পাসপোর্ট না পাওয়ায় এখন ধরনা দিচ্ছেন আগারগাঁওয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে (ডিআইপি) শীর্ষ কর্তাদের কাছে। কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে দ্রুত পাসপোর্ট পেতে সফল হলেও, বেশিরভাগকেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১১ অক্টোবর তিনি ই-পাসপোর্টের জন্য আগারগাঁও অফিসে আবেদন করেন। জমাদানের রশিদ অনুযায়ী গত ২৪ অক্টোবর তার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা। চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া জরুরি। কিন্তু এখনো পাসপোর্ট হাতে পাননি তিনি। আগারগাঁও অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে বলা হয়, এমআরপিতে প্রদত্ত জন্মতারিখ আর ই-পাসপোর্টের জন্য প্রদত্ত জন্মতারিখে মিল না থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রদত্ত সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তিনি। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কোনো ব্যক্তি বয়স পরিবর্তন করলে সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সর্বশেষ পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা চাকরিতে প্রবেশের সময় তথ্যাদি জমা দেন বিধায় এ ধরনের তথ্য পরিবর্তনের আবেদন বিবেচনার কোনো অবকাশ নেই। তবে সরকারি চাকরিজীবী যারা চাকরির পূর্বে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, তাদের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক তথ্য সংশোধন করা যেতে পারে।

জানা গেছে, ওই শিক্ষকের মতো বিভিন্ন সংশোধনের কারণে দীর্ঘ সময় লাগছে সেবাপ্রত্যাশীদের। সংশোধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হচ্ছে নামের প্রথমে ‘মোহাম্মদ’ নিয়ে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদে যাদের নামের আগে ‘মো.’ বা ‘মোহা.’ ছিল, আগে এমআরপি করার সময় সেখানে শুধু ‘মোহাম্মদ’ রাখার বিধান ছিল। সেই বিধান এখন আর নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যার নামের আগে যেটা লেখা আছে, সেটাই থাকছে। তবে সফটওয়্যারে বিষয়টি এখনো হালনাগাদ না করায় এ জন্য ভুল ধরে আবেদন আটকে দেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন করলেই ওই সমস্যার কারণে আটকে দিচ্ছে সফটওয়্যার। এ ছাড়া মা-বাবার নাম, আবেদনকারীর জন্মতারিখ, জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা সংযোজন-বিয়োজনের ক্ষেত্রেও সফটওয়্যারে আটকে যাচ্ছে আবেদনগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার তথ্য সংশোধনপূর্বক দেশে ও বিদেশে পাসপোর্ট রিইস্যুর আবেদন নিষ্পত্তিকরণ’ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল। পরিপত্র অনুযায়ী, বয়স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের ব্যবধান পর্যন্ত বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু দেখা গেছে, অনেকেই ১০ বছর পর্যন্ত বয়স পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। তাতে প্রাথমিক পরীক্ষাতেই আটকে যাচ্ছে আবেদনগুলো।

এদিকে ই-পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি কমাতে নতুন অফিস স্থাপন ও জনবল বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ডিআইপি। প্রতিষ্ঠানটির সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হওয়া থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। মাসে অন্তত ৫ লাখ পাসপোর্ট মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিআইপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে ৯০০ জনবল চেয়ে আবেদন করেছে। এ জনবল নিয়োগ হলে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে মনে করছেন ডিআইপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকায় পাসপোর্ট সেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা পূর্ব ও পশ্চিম নামে দুটি অফিস স্থাপনের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত জনবল সংকটের কারণে সেবাগ্রহীতাদের পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে যে জনবল আছে তা দিয়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮০০-এর মতো আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়া করা যায়। কিন্তু আমরা সুপার এক্সপ্রেসসহ দুই হাজারের মতো আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়া করছি। সুতরাং জনবল না বাড়ালে এ সংকটের সমাধান হবে না। প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে কিছু জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে এ অফিসের চলমান সমস্যা অনেকটা দূর হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877